একুশে সিলেট ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সরকার ভুল পদক্ষেপ নিলে তা নিয়ে সমালোচনা হবেই।’ শনিবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার পালানোর পর দেশের প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে এসেছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের ১৬ বছরের জঞ্জাল তিনমাসে দূর করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাদের কাজে সন্তুষ্ট না হলে জনগণের প্রশ্ন তোলাও অস্বাভাবিক নয়। কোনো ভুল পদক্ষেপের সমালোচনা হবেই, সরকারের অদক্ষতা হিসেবে তা বিবেচিত হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে ব্যর্থ করতে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা বসে নেই। সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের আন্দোলনের ফসল। তাই এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ হব। তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত জনআকঙ্খার বিপরীতে যাচ্ছে, জনগণ ভাবছে সরকার নিজেদের ভালো সিদ্ধান্তগুালো চাপিয়ে দিতে চাইছে।’
আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতরা যখন সুচিকৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে সড়কে নেমে আসে, তা খুবই বিব্রতকর। আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় কোন পর্যায়ে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা, পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।’
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন সংস্কার করছে। জনগণ মনে করছে তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন।’ মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাচ্ছে, জনগণ এটা বুঝতে পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
অধিবেশনের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেটেব আহ্বায়ক ফখরুল আলম। দ্বিতীয় অধিবেশন প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রত্যক্ষ গোপন ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ফখরুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এ কে এম রুহুল আমিন আকন্দ।
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি ভবিষ্যত বাংলাদেশের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সনদ বলে আমরা মনে করি। ঘোষিত এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে মানসম্পন্ন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপরও কিন্তু জোর দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, জনসংখ্যা কোনো অভিশাপ নয় বরং এই জনসংখ্যাকে যদি মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায় তাহলে দেশের উন্নয়নে এটাই বড় শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করছে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ পরিবেশে ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণ তাদের প্রতিনিধিদেরকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। জনগণ যখন সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবে তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করছে তখন জনগণের সাথে সম্পর্কটা দৃঢ় হবে।’
দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার লক্ষ্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের জীবনযাত্রাকে একটু ভালো করা, শিক্ষাব্যবস্থা ভালো করা, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো করা, নিরাপত্তা ভালো করা আমাদের লক্ষ্য। অতীতে যখনই জনগণের ভোটে বিএনপি সুযোগ পেয়েছে তখন চেষ্টা করেছে যতটুকু সম্ভব এই কাজগুলো করার।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তবর্তী কালীন সরকার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সংস্কারের কাজ করছে, আমরা তাদের সমর্থন করি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা করবেন। আমাদেরকে সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, দলের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমান, সদস্য সচিব এ বি এম রুহুল আমিন আকন্দসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply